শী-
হেনরি রাইডার হ্যাগার্ড

হেনরি রাইডার হ্যাগার্ডের 'শী' ১৮৮৭ সালে প্রকাশিত হয়।'শী' প্রথমে Graphic ম্যাগাজিনে ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত হয়।এটি আয়েশা সিরিজের প্রথম বই।
'আয়েশা' সিরিজের প্রচুর জনপ্রিয়তা রয়েছে।'শী' বইটিরও প্রচুর জনপ্রিয়তা আছে।তবে 'শী' এর কপালে অনেক সমালোচনাও জুটেছে।অনেকে বলেছে বইটি অনেক জায়াগায় একঘেয়ে হয়ে যায়,ঘটনাপ্রবাহ মন্থর হয়ে যায়।আবার অনেকে বলেছে হ্যাগার্ডের লেখনী অত্যন্ত বাজে।আবার অনেকের প্লটটাই বাজে লেগেছে।কেউ কেউ বলেছেন বইটি অত্যন্ত ভিক্টোরিয়ান।

এক সমালোচক, অগাস্টাস মুর বলেছিলেন, 'যখন ইংরেজরা ডেফো,সুইফট, থ্যাকারে,চার্লস ব্রন্টে,জর্জ ইলিয়ট এমনকি চার্লস রিডের বইয়ের বদলে হ্যাগার্ড সাহেবের বিরক্তিকর বই গুলো হাতে তুলে নেন।তখন তাদের সহায়তা ঈশ্বরই করুক। '
তবে এত সমালোচনা, এত ধিক্কার 'শী'কে থামিয়ে রাখতে পারেনি।বর্তমানে বইটি সর্বোচ্চ বিক্রিত বইয়ের তালিকায় অষ্টম।বিক্রি হয়েছে ১০ কোটি কপিরও বেশি। ৪৪টি ভাষায় অনূদিত হয়েছে।
'শী' দ্বারা রাইডার হ্যাগার্ড 'লস্ট ওয়ার্ল্ড' সাব জনরার প্রবর্তন করেছেন।পরবর্তী যুগে ফ্যান্টাসি,এডভেঞ্চারের অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন।অনেকে সমালোচনা করলেও, বইটি অধিকাংশ পাঠকের প্রশংসা কুড়িয়েছে।
হেনরি রাইডার হ্যাগার্ডকে অমর করে দিয়েছে।
যতই সমালোচনা থাকুক, 'শী' কিংবা হেনরি রাইডার হ্যাগার্ড ছাড়া এডভেঞ্চারের সংজ্ঞা দেওয়া যাবে না।
অনেকে বলেছেন,'শী' অনেক জায়গায় একঘেয়ে হয়ে পড়ে।কথাটাকে একদম অমূলক বলে উড়িয়ে দেওয়া যাবে না।আবার অকাট্য বলাও যাবে না।বইটার কোথাও কোথাও একঘেয়েমির ছোঁয়া পাওয়া গেলেও, উত্তেজক বর্ণনা এবং প্রাচীন এবং লস্ট ওয়ার্লের রহস্যময় বর্ণনা মোহগ্রস্ত করে রাখে।একঘেয়ে মনেই হয় না।
আর বইটি ১৯ শতকের,এটাও মনে রাখা উচিত।তখন রোলার কোস্টার থ্রিলারের প্রচলন ছিল না।
হ্যাগার্ডের লেখনী বাজে,একথাও অনেকে বলেছে।আগে ব্রিটিশরা শব্দ চয়ন,বর্ণনা ভঙ্গিকে অনেক দাম দিত।কারো লেখায় এসব বিষয়ে গাম্ভীর্য না থাকলে তার তুমুল সমালোচনা করত।হ্যাগার্ড তারই শিকার।যাদের হ্যাগার্ডের লেখনী বাজে মনে হয়েছে তাদের বলছি,হ্যাগার্ড কোনো কবি,ড্রামা লেখক ছিলেন না।তিনি এডভেঞ্চার লেখক ছিলেন।তার লেখায় সাহিত্য একটু কম থাকবে এটাই স্বাভাবিক।
অনেকে প্লটটাকে বোগাস বলেছেন। প্লটকে বাজে বলার যুক্তি খুঁজে পাচ্ছি না।একটা ফ্যান্টাসি এডভেঞ্চারের প্লট এর চেয়ে ভালো কিভাবে হয়।
'শী' মূলত এডভেঞ্চার জনরার রচনা।হেনরি রাইডার হ্যাগার্ড তার কর্মস্থল আফ্রিকার অভিজ্ঞাতকে বইটি লেখায় লাজে লাগিয়েছেন।তিনি ছয় সপ্তাহের মধ্যেই বইটি লেখা সম্পূর্ণ করেন।তিনি তার লিটারেরি এজেন্টের অফিসে বসে 'শী' এর শেষটুক লিখেছিলেন। লেখা শেষে ম্যানুস্ক্রিপ্ট এজেন্টের টেবিলে ছুড়ে ফেলে বলেন, এটাই সেটা, যার জন্য আমি বিখ্যাত হয়ে থাকব।
পুরো বইটি জুড়েই এডভেঞ্চার আছে।লস্ট ওয়ার্ল্ডের রহস্যময় বর্ণনা আছে।অনেকে বলেন বইটি পড়তে নাকি প্রচুর ধৈর্য লাগে।আমার সেরকম মনে হয়নি।বইটি পড়া শুরু করার পর মোহগ্রস্ত হয়ে গেছি।শেষ না করে উঠাই মুশকিল হয়ে গিয়েছিল।বইটির প্রাচীন বর্ণনা,উত্তেজক লেখনী, রহস্যময় চরিত্র বইটিকে একটি মাস্টারপিসে পরিণত করেছে।
প্রাচীন বর্বরদের বর্ণনাও খুবই সুন্দরভাবে দেওয়া হয়েছে।
বইটি পড়ে নরজাতির আয়েশার উপর চূর্ণ হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা আছে(আমি নিজেও চূর্ণ হয়েছিলাম)।
বইটির মূল চরিত্র আয়েশা।খুবই রহস্যময় চরিত্র।আয়েশার জন্ম দুই হাজার বছর পূর্বে আরবে।অসম্ভব রূপধর, কোনো মানুষের পক্ষে তার রুপকে সহ্য করা দুষ্কর। আয়েশা চরিত্র অস্বাভাবিক ক্ষমতা সম্পন্ন। তাকে ঘিরেই রহস্য আর কাহিনী এগোতে থাকে।
লিও ভিন্সি।এডভেঞ্চারের নায়ক লিও।তার বংশের একটি রহস্যের কিনারা করতে অভিযানে বের হয় লিও।অভিযানে প্রত্যক্ষ করে রহস্যময় সব ঘটনা।
হোরেস হলি।তার উত্তম পুরুষ বর্ণানায় লেখা হয়েছে বইটি।লিও এর অভিযানসঙ্গী হলি।পেশায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর।দেখতে বাঁদরের মতো।এই অভিযানে সে প্রত্যক্ষ করে রহস্যময় সব ঘটনার।
বইটিতে আরও অনেক চরিত্র আছে।সব চরিত্রের কথা উল্লেখ করলাম না।
কাহিনী সংক্ষেপ। লিওর বংশের এক প্রাচীন রহস্য এখনও উম্নোচিত হয় নি।পরিণত বয়স হলে তাকে সে ব্যাপারে জানানো হয়।সে অভিযানে বেরিয়ে পড়ে,সাথে হোরেস হলি।অভিযানেই তারা আয়েশার দেখা পায়,অসম্ভব রূপবতী আয়েশা।ক্যালিক্রেটিসকে খুঁজছে সে,যাকে দুই বছর আগে মেরেছিল আয়েশা নিজেই।অবশেষে ক্যালিক্রেটিসকে পেল সে।চিরকালের জন্য তার করে নিতে চায় ক্যালিক্রেটিসকে। তারপর?
হেনরি রাইডার হ্যাগার্ডের এই বইটি এডভেঞ্চার জনরার অন্যতম শ্রেষ্ঠ রচনা।অনেকেই হয়তো বইটি পড়ে ফেলেছেন,যারা পড়েননি তাদের পড়ে ফেলার অনুরোধ করছি।
বইটি নিয়াজ মোরশেদ বাংলায় অনুবাদ করেছেন।প্রকাশ করেছে সেবা।
বইটি রিভিউ লিখেছেন: Afikur Rahman



বইটি ডাউনলোড করাবার জন্য নিচের ডাউনলোড বাটনে ক্লিক করুন


Sisir Suvro

শুধুমাত্র পাঠকদের জন্যই আমার এ ক্ষুদ্র প্রয়াস। পাঠক তার পছন্দের বই পড়বে তাতেই আমার পরিশ্রমের স্বার্থকতা।পাঠক বই পড়বে, বই নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা করবে, তর্ক বিতর্ক হবে, এতেই তো বই পড়ার স্বার্থকতা। বই পড়ার আনন্দ নিজের মধ্যে না রেখে তা ছড়িয়ে দিন সবার মাঝে।

1 comment: